উপাসনা আত্মার খাদ্য, প্রার্থনা প্রাণের অমৃতরসায়ন। জীবনের ঘোর দুর্দিনে, দুঃখ-দৈন্য-অসুখ-অশান্তি-হাহাকারের মাঝে প্রার্থনাই মানুষের একমাত্র আশ্রয় ও অবলম্বন । অনাহারক্লিষ্ট দুর্বল শরীর যেমন দৈনন্দিন আহারের দ্বারা পরিপুষ্ট ও পরিবর্দ্ধিত হয়, তেমনি জন্মজন্মান্তরের বুভুক্ষিত পাপতাপক্লিষ্ট মানবাত্মাও প্রার্থনা দ্বারা সুস্থ সবল, সজীব ও নূতন তেজে উদ্দীপ্ত হইয়া উঠে ।
বিবিধ ঘাত-সংঘাত, জ্বালা-যন্ত্রণায় যখন হৃদয়-তন্ত্রী ছিন্নভিন্ন হইয়া যায়, বিভিন্ন রকম বিপদাপদ বিষাদ অবসাদে প্রাণমন যখন ভাঙ্গিয়া পড়ে, প্রাণপাতী পরিশ্রম, চেষ্টা-যত্ন, উদ্যোগ উৎসাহ সমস্তই যখন নিদারুণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, হতাশা-নিরাশার নিষ্ঠুর কশাঘাতে জর্জরিত হইয়া যখন নিতান্ত অসহায়ভাবে শুধু মরণের প্রতীক্ষায় দিন গণিতে ইচ্ছা হয়, তখন— জীবন-মরণ সমস্যার সেই নিদারুণ দুঃসময়ে একটিবার কেবল হৃদয়ের দ্বার খুলিয়া দাও, সমস্ত প্রাণমন ঢালিয়া শ্রীভগবানের রাতুল চরণে আকুল প্রার্থনা নিবেদন কর, আগ্রহ-ব্যাকুল হৃদয়ে সমস্ত অন্তর দিয়া তাঁহার শরণ গ্রহণ, আশ্ৰয় ভিক্ষা কর, দেখিবে, মুহূর্তের ভিতর যেন কাহার স্নেহশীতল হস্তের স্নিগ্ধ মধুর স্পর্শে অশান্তির দাবানল নিভিয়া গিয়াছে, সমস্ত জ্বালামালা বিষাদ অবসাদ দূর হইয়া অন্তরের গভীরতম প্রদেশে নিৰ্ম্মল শান্তির অনাবিল ধারা ঝির ঝির করিয়া বহিয়া চলিয়াছে, কে যেন তোমার আঁধার পথ আলো করিয়া পর্বতপ্রমাণ বাধাবিপদ পায়ে দলিয়া আগে আগে পথ দেখাইয়া চলিয়াছে ।
দাও, আপনাকে সম্পূর্ণ রিক্ত করিয়া, মুক্ত করিয়া, উজাড় করিয়া নিঃশেষে তাঁহার শ্রীচরণে ঢালিয়া দাও, প্রার্থনা ও উপাসনার ভিতর দিয়া তাঁহার সহিত নিরবচ্ছিন্নভাবে যুক্ত হও, অন্তরকে সর্ব্বদা পূর্ণরূপে তাঁহার প্রতি উন্মুখ করিয়া রাখ, তবেই নিমেষের মধ্যে তাঁর কৃপা বৈদ্যুতিক স্পর্শে তোমার হতাশা-বিপর্যস্ত প্রাণমন সরল সতেজ হইয়া উঠিবে, তাঁহার অহৈতুক করুণাধারায় অভিসিঞ্চিত হইয়া সমগ্র জীবন-জনম ধন্য ও কৃতার্থ হইয়া যাইবে ।
0 Comments